বেনিয়ন জীবনযাপন। বাইরের খাওয়ার। বাচ্চাদের কেরিয়ারে কি বাধা তৈরি করছে ? বিশেষ করে প্রচুর পরিমাণে জাঙ্কফুড খাওযার ফলে, ওজন বাড়ছে। ঘুমের পরিমাণ কমছে। সঙ্গে রক্তে শর্করার পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে অল্প বয়সেই ডায়াবেটিসের (Diabetes) শিকার হচ্ছে অনেক শিশু। আর এর প্রভাব পড়ছে তাদের লেখাপড়ায়।
একটা সময় টাইপ ২ ডায়াবেটিস মধ্যবয়স্কদের অসুখই ছিল। কিন্তু বিগত বেশ কিছু বছরে দেখা যাচ্ছে শিশু এবং কিশোরের মধ্যে এই রোগের সম্ভাবনা মারাত্মকহারে বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গেছে, দেশে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে ওবেসিটি ও ডায়াবেটিসের (Diabetes) হার ৮-১২ শতাংশ। তবে সবথেকে যে রিপোর্ট ভয়ের তা হল, গত ১০ বছরে শিশুদের মধ্যে টাইপ–২ ডায়াবেটিসের বাড়বাড়ন্ত প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বেশি। Weight Loss: ওজন কমছে না, সারাদিন ক্লান্তি, ফুলছে পেট – জানেন কেন ?
এমনিতেই রাত জাগা।রাস্তার উল্টোপাল্টা খাবারের অভ্যেস। খেলাধুলো একেবারেই বন্ধ হযে যাওয়া, সব মিলিয়ে এক জটিল সমস্যার দিকে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে একটা জেনারেশন। অন্যদিকে পরািবারিক কারণে বা জেনেটিক কারণে ডায়াবেটিস (Diabetes) বা ওবেসিটি কম বয়সেই অনেকের শরীরে বাসা বাঁধে।
যেমন গর্ভধারণের সময় কোনো মহিলার যদি ডায়াবেটিস বা ওবেসিটি থাকে, তাহলে তাঁর সন্তানের সেই রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যায়।কারণ মায়ের পুষ্টির অভাব। শারিরীক পরিশ্রম কম করার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি-এগুলো সব গিয়ে তার সন্তানের উপর পরে। শুধু তাই নয়। সঙ্গমের সময় যদি কোনো পুরুষের ডায়াবেটিসের লেভেল বেশি থাকে, তাহলেও কিন্তু একটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ে সমীক্ষা কী বলছে? (Research on Diabetes)
Metta DANA সম্প্রতি কলকাতার বিভিন্ন স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে একটা সমীক্ষা চালায়। প্রায় ৭ বছর ধরে সেই সমীক্ষা চালানোর পর দেখা যায়, শহরের ২০ শতাংশ শিশুই হয় ডায়াবেটিকে আক্রান্ত না হলে ডায়াবেটিস হওয়ার আগের মুহুর্তে রয়েছ। এই শিশুদের পরীক্ষায় ফল, অন্যান্যদের তুলনায় খারাপ। ঘনঘন স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে তাদের লেখাপড়ায়।
ডায়াবেটিস ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এটি পড়াশোনার ফলাফলকে বড়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই গবেষণা ৮–১০ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের উপর ছিল—এই সময়টা মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—এবং লক্ষ করা গেছে ডায়াবেটিক ও প্রি-ডায়াবেটিক বাচ্চাদের পারফরম্যান্স তুলনামূলকভাবে খারাপ। জানিয়েছেন দেবাশিস বসু (Debasis Basu), সংস্থার চেয়ারম্যান।
আগে যখন মোবাইল ফোন বা ট্যাব, কম্পিউটার- এই ধরণের ইলেক্ট্রনিক গেজেট ছিলনা, বাচ্চারা দিনের একটা বড় সময়, মাঠে কাটাতো। কিন্তু এখন সবার হাতেই মোবাইল। খেলাধুলো প্রায় বন্ধ। ফলে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে সময় কাটানোর মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, যে বাচ্চারা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে তবে সময়মতো স্ক্রিনিং করলে ডায়াবেটিস প্রথম পর্যায়েই ধরা পড়ে। ডায়াবেটিস হলে নিয়মিত চিকিৎসা আর জীবনযাপনের পরিবর্তন বেশিরভাগ জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস জরুরি—কিশোরদের খাদ্যতালিকায় জটিল কার্বোহাইড্রেট, প্রচুর ফল ও শাকসবজি, কম চর্বিযুক্ত দুধ ও দই থাকা উচিত। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,”—তিনি আরও বলেন।
উচ্চ-চিনি-সমৃদ্ধ খাবার দ্রুত গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অল্প বয়সেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
“অল্প ঘুম, খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও কম শারীরিক পরিশ্রম—এই জীবনযাপন-সংক্রান্ত কারণগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এবং কিশোরদের মস্তিষ্কের বিকাশে ও সামগ্রিক কর্মক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে,”—বলেছেন অভিজিত আইচ ভৌমিক (Abhijit Aich Bhaumik), কনসালট্যান্ট চিকিৎসক, পোদ্দার হাসপাতাল।