শীতকাল মানেই একটু ভালো-মন্দ খাওয়া। ঘুরে বেড়ানো। মদ্যপানের অভ্যাস আছে অথচ হার্ড ড্রিঙ্কস পছন্দ না হলে অবশ্য ওয়াইন (Wine Health Benefits) তো আছেই। তবে কেউ রেড ওয়াইনের (Red Wine) গাঢ় এবং সমৃদ্ধ স্বাদ পছন্দ করেন। আবার কেউ হোয়াইট ওয়াইনের (White Wine) সতেজ ও হালকা স্বাদ বেছে নেন। স্বাদ এবং পছন্দের বাইরেও অনেকের অবশ্যই যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খায়, তা হল শরীরের জন্য কোন ওয়াইন বেশি ভালো ?
ওয়াইন ও স্বাস্থ্য
একটি স্ট্যান্ডার্ড ৫ আউন্স (১৪৮ মিলি) গ্লাসের রেড ওয়াইনে প্রায় ১২৫ ক্যালোরি থাকে। উল্টো দিকে হোয়াইট ওয়াইনে থাকে গড়ে ১২১ ক্যালোরি। দুটিতেই প্রায় ৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। তবে রেড ওয়াইনে রেসভেরাট্রল (resveratrol) এবং ট্যানিন (tannins) নামক উপাদানের পরিমাণ বেশি থাকে। কারণ এটি আঙুরের খোসাসহ তৈরি করা হয়। ফলে রেড ওয়াইন পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং আয়রনের মতো ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের ক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে থাকে। Best Vegan Face Serums: ৫টি ভেগান ফেস সিরাম একনজরে
উল্টো দিকে হোয়াইট ওয়াইন তৈরির প্রথম সর্তই হল, খোসা এবং আঙুরের বীজ তরল থেকে আলাদা করে রাখা। ফলে এর ঘনত্ব রেড ওয়াইনের থেকে অনেক বেশি হাল্কা হয়। ফলে রং হওয়ার কোনো প্রশ্নই থাকে না। এবং অবশ্য়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা রেড ওয়াইনের তুলনায় কিছুটা কম থাকে।
হার্ট এবং মস্তিষ্কের যত্ন নেয় রেড ওয়াইন
চিকিৎসকেরা একটা কথা প্রায়ই বলে থাকেন, ওয়াইন খেলে হৃদরোগের সম্ভাবনা খানিকটা কমে আসে। এই ধারণাটাকে ‘ফ্রেঞ্চ প্যারাডক্স’ (French paradox) বলা হয়। এখন আপনার মনে নিশ্চই প্রশ্ন আসছে, এই ফ্রেঞ্চ প্যারাডক্স কি ! ১৯৮০-র দশকে এক গবেষণায় দেখা যায়, যে ফ্রান্সের লোকেরা প্রচুর পরিমাণে চর্বিযুক্ত খাবার (যেমন মাখন, চিজ, মাংস ইত্যাদি) খেলেও তাঁদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অন্যান্য দেশের তুলোনায় অনেক কম। এর কারণই নাকি রেড ওয়াইন (Wine Health Benefits)। গবেষণায় দেখা যায়, রেড ওয়াইন খাওয়ার ফলে ফরাসিদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। এই ধারণাটাকেই ফ্রেঞ্চ প্যারাডক্স বলে। এর কারণ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়ছে রেড ওয়াইনের পলিফেনল কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। একইসঙ্গে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
শুধু কি তাই ? অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে। রেড ওয়াইন মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করার প্রধান কারণ হলো এতে থাকা শক্তিশালী কিছু প্রাকৃতিক যৌগ।

নিচে এর মূল কারণগুলো সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হল:
রেড ওয়াইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো রেসভেরাট্রল, যা আঙুরের খোসায় পাওয়া যায়। এটি মস্তিষ্কের জন্য একটি “সুরক্ষা কবচ” হিসেবে কাজ করে: অ্যামাইলয়েড প্লাক প্রতিরোধ: আলঝেইমারস রোগের অন্যতম কারণ হলো মস্তিষ্কে ‘বিটা-অ্যামাইলয়েড’ নামক প্রোটিনের আস্তরণ বা প্লাক জমা হওয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, রেসভেরাট্রল এই প্লাক গঠনে বাধা দিতে পারে। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি: এটি মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোকে শিথিল রাখতে সাহায্য করে, ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও পুষ্টিসমৃদ্ধ রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, যা স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ রাখে।
রেসভেরাট্রল (Resveratrol) :
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (Oxidative Stress): আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে ‘ফ্রি র্যাডিক্যালস’ (Free Radicals) তৈরি হয়, যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে (একে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বলে)। রেড ওয়াইনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ এই ফ্রি র্যাডিক্যালগুলোকে ধ্বংস করে। মস্তিষ্কের কোষের অকাল মৃত্যু রোধ করে এবং বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।
প্রদাহ (Inflammation):
মস্তিষ্কের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (Inflammation) স্মৃতিশক্তি হ্রাসের একটি বড় কারণ। রেড ওয়াইনের পলিফেনলগুলো মস্তিষ্কের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা নিউরনগুলোকে দীর্ঘকাল সুস্থ ও সচল রাখে।
নিউরোট্রান্সমিটার (Nurotransmitter) :
রেড ওয়াইন মস্তিষ্কের সেই রাসায়নিক যোগাযোগ বা ‘সিগন্যালিং’ ব্যবস্থাকে উন্নত করে যা শেখা এবং নতুন কিছু মনে রাখার জন্য দায়ী। এটি হিপোক্যাম্পাস (Hippocampus)—যা মস্তিষ্কের স্মৃতি কেন্দ্র—তার কোষগুলোর পুনরুৎপাদনে সাহায্য করতে পারে।
যারা ক্যালোরি সচেতন, তাদের জন্য কিন্তু অবশ্যই এটি ভালো পছন্দ হল হোয়াইট ওয়াইন। এতে টাইরোসল (tyrosol) নামক উপাদান থাকে যা হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় কাজ করে। ট্যানিন থেকে মাথাব্যথা বা হজমের সমস্যা হয়, তাদের জন্য হোয়াইট ওয়াইন অনেক বেশি আরামদায়ক কারণ এতে ট্যানিনের মাত্রা খুব কম থাকে।
সংক্ষিপ্ত টিপস: রেড ওয়াইন আপনাকে দেবে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আর হোয়াইট ওয়াইন দেবে কম ক্যালোরি ও সতেজ স্বাদ। আপনার শারীরিক গঠন এবং মুহূর্তের চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই সেরা ওয়াইনটি বেছে নিন। তবে অশ্য়ই একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, আমাদের মতো দেশের তাপমাত্রা কিন্তু কখনই ইউরোপিয়ান দেশগুলির মতো শীতল নয়। ফলে গরমকালে ওয়াইন খেলে পেটের সমস্য়ায় ভুগতে পারেন। পাশাপাশি, বেশি পরিমাণে ওয়াইন খাওয়া কখনই ভালো নয়। এমনকি শীতকালেও বেশি পরিমাণে ওয়াইন খাওয়া ঠিক নয়। এতে শরীরে নানান ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে পারে। বিশেষ করে শরীর কষে যাওয়া। কোষ্টকাঠিন্য়ের সমস্য়া তৈরি হওয়া। লিভারের সংক্রমণও দেখা দিতে পারে।